কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: যৌন লিপ্সা চরিতার্থ করতে নিজের ছোট শ্যালিকা কলেজ ছাত্রী রেখা খাতুন (১৮) কে অপহরণ ও হত্যাকান্ডে রূপালী ব্যাংকের গাড়ী চালক খুনি আওলাদ হোসেন (৪৫) ব্যবহার করে ব্যাংকের অফিসিয়াল কাজে ব্যবহৃত সিলভার কালারের মিতসুবিসি মাইক্রো নং ঢাকা মেট্রো:-চ ৫৩-৬৮৪৭ গাড়িটি। হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার নিহতের বড় দুলাভাই রূপালী ব্যাংক কুষ্টিয়া জোনাল অফিসের গাড়ী চালক আওলাদ হোসেন (৪৫) হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে দেয়া বক্তব্যে উল্লেখ করেছে।
কুষ্টিয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম জানান, ‘কলেজ ছাত্রী রেখা খাতুন হত্যার দায়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় নিহতের পিতা আব্দুর রহিম ব্যাপারী বাদি হয়ে করা মামলায় গ্রেফতার হওয়া আওলাদ হোসেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট-১ মোস্তাফিজুর রহমানের খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন, এবং বিস্তারিত বিবরণসহ হত্যাকান্ডের মোটিভ রেড়িয়ে এসেছে’।
স্বীকারোক্তিতে আওলাদ হোসেন বলেন, ‘বুধবার (৬ডিসেম্বর) আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে ফোন করে ডেকে রেখাকে বিয়ে উপলক্ষে কিছু কেনাকাটা করে দেয়ার কথা বলে কুমারখালী মহিলা কলেজ থেকে নিজের ব্যবহৃত মাইক্রোতে তুলে নিয়ে আসেন। কুষ্টিয়া হাইস্কুল চত্বরে রূপালী ব্যাংকের ভাড়া করা গাড়ী গ্যারেজে রেখাকে সহ মাইক্রো ঢুকিয়ে দেয়। দুপুর ২টায় গাড়ী মেরামত বাবদ একটি বিল ভাওচার তৈরী করে ব্যাংকে ফিরে যায় টাকা নেয়ার জন্য। অফিসে বিল ভাওচার জমা দিয়ে আবার গ্যারেজে ফিরে আসে। এসময় গাড়ীর মধ্যেই রেখাকে কু-প্রস্তাব দিলে রাজি না হওয়ায় তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়’। পরে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রেখার মরদেহ কম্বলে পেঁচিয়ে মাইক্রোসহ গ্যারেজ থেকে বেড় হয়ে যায়। কুষ্টিয়া চৌড়হাস মোড় হয়ে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি সড়ক দিয়ে মন্ডল ফিলিং ষ্টেশনের নিকটস্থ কালভার্ট সংলগ্ন ঢালুদিয়ে নেমে হাউজিং ই-ব্লকের পৌর ডাস্টবিন বা ভাগাড়ের সামনে ছিপছিপে বৃষ্টির মধ্য আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে জনশুন্য দেখে রেখার মরদেহ ফেলে দেয়া হয়’। সেখান থেকে ফেরার পথে রেখার ব্যবহৃত ভ্যানিটি ব্যাগটি কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কে মজমপুর এলাকায় ফেলে দেয়া হয়।
আওলাদ হোসেনের চাকরীস্থল রূপালী ব্যাংক কুষ্টিয়া জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো: সেলিম উদ্দিন জানান, ‘বুধবার বেলা ১২টার সময় আওলাদ হোসেন গাড়ী সার্ভিসিংয়ের কথা বলে অফিস থেকে বেড়িয়ে যায়। এরপর মাঝে দুপুর ২টার দিকে এসে গাড়ী সার্ভিসিংয়ের বিল ভাওচার জমা দেয়। এরপর সন্ধ্যায় মাগরিরেব আজানের পূর্ব পর্যন্ত আওলাদ হোসেন কোথায় ছিলেন সে বিষয়ে আমার কাছে সঠিক কোন তথ্য নেই। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় সে অন্যান্য দিনের মতো অফিস ছুটি করে বেড়িয়ে যায়’।
ঘটনার শুরু থেকেই নিহতের পরিবারের অভিযোগ ছিলো, দশম শ্রেনীতে পড়াকালীন সময় থেকেই আওলাদ কলেজ ছাত্রী রেখাকে যৌন হয়রানি করে আসছিলো। বিষয়টির সুরাহার জন্য পারিবারিক ভাবে একাধিকবার বার কথাও হয়েছে। কিন্তু তাতে খ্যান্ত দেয়নি আওলাদ। এমনকি আওলাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে রেখা ফোন কলের মাধ্যমে যোগাযোগ হওয়া হাফিজুর নামে একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং এই সম্পর্কের বিষয়টি পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিবাহের মাধ্যমে শেষ করা হয়। কিন্তু এই রেখার এই বিবাহকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি আওলাদ। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে এবং রেখাকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। উপায়ান্তর না পেয়ে রেখা বিষয়টি পরিবার ও স্বামী হাফিজুর কে জানায় যেনো দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় না হলে তার দুলাভাই প্রতিদিনই রেখাকে উত্ত্যক্ত করছে। এর সমাধানে পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রেখাকে এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বশুড় বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক আলমগীর হোসেন জানান, ‘কলেজ ছাত্রী রেখা খাতুন হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত মাইক্রোসহ আনুষঙ্গিক আলামত জব্দ করা হয়েছে। তবে রেখা খাতুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যার ছাড়াও আরও কোন নির্যাতন চালানো হয়েছিলো কি না সেবিষয়ে ডাক্তারি রিপোর্ট হাতে পেলে বলতে পারবো’। তাছাড়া এই হত্যাকান্ডে আরও কেউ জড়িত আছে কি না সেবিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য গত বুধবার কুষ্টিয়ার হাউজিং এলাকার ভাগার থেকে কলেজ ছাত্রী রেখা খাতুনের কম্বলে মোড়ানো মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এঘটনায় হত্যার অভিযোগে কুষ্টিয়া মডেল থানায় নিহতের পিতা কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের দড়ি বাখই গ্রামের আব্দুর রহিম ব্যাপারী বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলায় জড়িত সন্দেহে নিহতের বড় দুলা ভাই রূপালী ব্যাংকে গাড়ী চালক আওলাদ হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতে সৌপর্দ করে পুলিশ।